রাজনৈতিক সমঝোতাই আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৫, রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪, ৯ আষাঢ় ১৪৩১

সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারাটা ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে নিজ দলে তৃণমূল পর্যায়ে বিরোধ মেটানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা।

বিশ্লেষকদের মতে, নব্বইয়ের পর আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনী পর্যায়ক্রমে ব্যাপকভাবে ক্ষমতাবান হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল অর্থ উপার্জন করছেন। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে এসব এখন কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক শক্তির আস্থার বড় জায়গা আওয়ামী লীগ। কিন্তু নানা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে দলটিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গেও সমঝোতা করতে হয়েছে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সংকটের পাশাপাশি টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলে দেখা দিয়েছে নানা ধারা-উপধারা। এর প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে। কর্মীনির্ভর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে প্রভাব বেড়েছে সরকারি আমলা ও পুলিশের। দৃশ্যত দলটি এখন অনেকটাই আমলানির্ভর।

যদিও আওয়ামী লীগের দাবি, তারা কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করেনি, আর দলও আমলানির্ভর হয়নি। কর্মীদের নেতৃত্বে তৃণমূলে তারা ঐক্যবদ্ধ। সাংগঠনিক শক্তির কারণে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। তাদের সরকার পদ্মা সেতুর মতো চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প বাস্তবায়ন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে।

এমন বাস্তবতার মধ্য দিয়েই দলটি উদ্‌যাপন করছে প্লাটিনাম জুবিলি বা ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই দলের যাত্রা শুরু। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে দলটি ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশসহ দিনভর নানা কর্মসূচি রয়েছে। ২৪ জুন হাতিরঝিলে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে বিরোধ কমিয়ে আনা। সংসদকে কার্যকর করতে হবে। সেটা করতে হলে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, তাদের সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া, যাতে নতুন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দলটির ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নতুনভাবে সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৯ সাল থেকে চার মেয়াদে ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় দলটি।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে, ধীরে ধীরে নেতৃত্বের গুণ অর্জন করেছেন এবং সফল হয়েছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া তো এখন দেশে দ্বিতীয় কোনো নেতা নেই। সেটা আওয়ামী লীগের ভেতরেও নেই, অন্য কোনো দলের মধ্যেও নেই। এটা একটা শূন্যতা হয়ে দাঁড়াবে সামনে। সেটা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, যা অবৈধ স্বৈরশাসক এরশাদ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখাটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে যায় না।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা কোনোদিন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি।ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ কখনো বিচ্যুত হয়নি।’

অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, সরকারে থাকলে দলীয় লোকজন নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেন। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নব্বইয়ের পর আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে ক্ষমতাবান হয়ে গেছে। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে পুলিশ অতিমাত্রায় ক্ষমতাবান হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকার একটা সময়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। তাঁর মতে, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার সরকারের হাতে রয়েছে। 

Share This Article