বেনজীরের জমি থেকে উধাও হচ্ছে সাইনবোর্ড

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১১, বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় কেনা পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের জমি থেকে একে একে সাইনবোর্ড উধাও হয়ে যাচ্ছে। 

এ ছাড়া গোপালগঞ্জে কয়েকশ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জে স্বাস্থ্যের আলোচিত দুর্নীতিবাজ মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে চালু করা বেনজীরের ‘নর্থস চিকস রংপুর লিমিটেড’ মুরগির ফার্মেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বেনজীর পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জে প্রায় ৬শ বিঘা জমি কেনা হয়। এসব জমির প্রায় অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। অনেকে বলছেন, জমি বিক্রি ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না। ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে জমিগুলো কেনা হয়েছে।

আদালতের আদেশে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হলেও ৩ জুন সাভানা পার্কটি কর্তৃপক্ষ অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এখন আর কাউকে ওই পার্কে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমির প্রায় ৬শ বিঘাই গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের নীরব অজপল্লীর বিলে নামমাত্র দামে পাওয়া জমি কেনা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ।

বেনজীর আহমেদ যেখানে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক নামে রিসোর্ট করেছেন, এখানকার অনেক জমির মালিকের অভিযোগ রয়েছে সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে। অনেক জমির মালিকের জমি নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশলে। কাউকে চাপ দিয়ে, কাউকে চাকরির লোভ দেখিয়ে। আবার কোনো কোনো পরিবারকে পুলিশের ভয় দেখিয়েও জমি কব্জা করা হয়েছে।

জমি বিক্রেতা মনোজ বল জানান, আমার ১৪ বিঘা জমি বেনজীর নিয়েছে। আমি সব টাকা বুঝে পেয়েছি। আমার কোনো টাকা বাকি নাই। তবে আমার জানামতে, অনেকের জমি বায়নাপত্র করা হয়েছে কিছু টাকা দিয়ে। এই বায়নাপত্র করেই অনেকের জমি ভোগদখল করছেন তিনি। অথচ দলিল হয়নি।

এলাকার জমির মালিক বিনয় বল জানান, বেনজীর সাহেবের জমি কেনা ও দখল করার কাজে কয়েকজন পুলিশ কাজ করত। তারা এমন কৌশল করত যে জমি বিক্রি না করে কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলেন, আমার পৌনে দুই বিঘা জমি বিক্রি করার কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু জমি দিতে বাধ্য হয়েছি, যাতে অন্য ঝামেলায় পড়তে না হয়। 

তবে যারা জমি বিক্রি করতে রাজি হতেন না, তাদের ক্ষেত্রে আরেক কৌশল নিতেন বেনজীরের লোকেরা। সেটি হলো- ওই জমির আশপাশের জমি কিনে নিয়ে সেখানে যেতে বাধা দেওয়া। তিনি আরও জানান, বড় বড় দাগের জমি মালিকদের দলিল করতে গোপালগঞ্জে যাওয়া লাগত না। অফিসের লোকজন এসে পার্কে বসে দলিলে সই-স্বাক্ষর নিয়ে নিত। তাতেই দলিল হয়ে যেত।

এদিকে দুর্নীতিবাজ মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে চালু করা বেনজীরের ‘নর্থস চিকস রংপুর লিমিটেড’ মুরগির ফার্ম ২৩ দিন আগেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই ফার্মও বানানো হয়েছে জবরদখল এবং নামমাত্র টাকা দিয়ে। বেনজীর আহমেদ বিদেশে পালিয়ে গেছেন খবরে এই মুরগির ফার্মের আশপাশের মানুষ খুবই খুশি।

বেনজীরের কেনা সেন্টমার্টিন দ্বীপের অধিকাংশ জমি থেকে সাইনবোর্ড উধাও হয়ে গেছে। কারা উধাও করেছে তা বলতে পারে না স্থানীয়রা।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণপাড়ায় রাস্তার পাশে বড় একটি ফটক দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জমিতে কিছুদিন আগেও বেনজীর আহমেদের নামে সাইনবোর্ড ছিল। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ওই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা গ্রামে দুই ডাক্তারের নামে থাকা ৩শ বিঘা জমির সাইনবোর্ড রাতের আঁধারে উধাও হয়ে গেছে। এর মধ্যে এলাকায় রব উঠেছে, এসব জমির মালিক পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের। স্থানীয়রা বলেছেন, বেনজীর আহমেদ এই এলাকায় এসেছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছেন। বেনজীরের অর্থসম্পদের খবর গণমাধ্যমে আসার পর ওই সাইনবোর্ড উধাও করা হয়েছে। বেশিরভাগ জমি ডা. খালেদ মোহাম্মদ ইকবালের নামে। তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক প্রধান এবং বেনজীর আহমেদের পারিবারিক চিকিৎসক।

দেশত্যাগ করেছে কিনা জানে না দুদক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার দেশত্যাগ করেছে কিনা, সে বিষয়ে দুদকের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। দুদকের তলবে হাজির না হতে পারলে বেনজীর ও তার পরিবার ১৫ দিন সময় চাইতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।

বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশে রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, দেশে আছে নাকি বিদেশে গেছেন- এ সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।

তলবের বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল হক বলেন, দুদক কাউকে নোটিশ করলে তিনি আসতে বাধ্য কিনা, সেটা আইনে সুস্পষ্ট বলা নেই। না এলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তার সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে। এই এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে।

দুদক কমিশনার আরও বলেন, সময় দেওয়ার পরও যদি তিনি দুদকে না আসেন, তা হলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তখন নথিপত্র দেখে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় হবে, না হলে নয়।

অনুসন্ধানের স্বার্থে যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে উল্লেখ করে জহুরুল হক বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেও বিচার হবে, এতে কোনো বাধা নেই।

Share This Article