আবহমান কাল থেকে সমাজে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন হিজড়া জনগোষ্ঠীরা। সমাজে কোনো হিজড়া শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে অশুভ, অভিশাপ হিসেবে আখ্যা দেয়। তারা সমাজ ছাড়া হয়ে যায়। পথে-ঘাটে চাঁদা তুলেই দিন কাটে তাদের।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সমাজে হিজড়াদের প্রতি এ মনোভাব ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। বৈষম্য ভেদ করে হিজড়ারা এখন চলে এসেছেন সমাজের মূল ধারায়। এমনকি যুক্ত হচ্ছেন সরকারি চাকরিতেও।
দেশে প্রথমবারের মতো কোনো হিজড়া সংবাদ পাঠকের দায়িত্ব পেয়েছেন তাসনুভা আনান শিশির। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাকে নিয়োগ দিয়েছে বৈশাখী টেলিভিশন। একইসাথে বিনোদন বিভাগের নিয়মিত নাটকে যুক্ত করা হয়েছে আরেকজন হিজড়াকে। যার নাম নুসরাত মৌ।
সম্প্রতি মারুফ এবং জনি হোসেন নামের দুজন তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াকে নিজ কার্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টার রোলে) চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করা মারুফকে কম্পিউটার অপারেটর এবং অষ্টম শ্রেণি পাস জনি হোসেনকে অফিস সহায়কের কাজ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন এনজিওগুলো হিজড়াদের জন্য বিশদ আকারে বিউটি পার্লার খুলে দিচ্ছে। সেখানে তারা নিজেদের আয় রোজগারের সুযোগ পেয়েছেন।
শুধু দেশেই নয়, হিজড়াদের সম্মান মিলতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। চলতি বছর থেকে হিজড়ারা বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে মিস পানামা অর্গানাইজেশন। ইতোমধ্যে ভারতে ট্রাফিক পুলিশে কিছু হিজড়াকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, হিজড়া জনগোষ্ঠার অধিকার নিশ্চিত, মর্যাদা ও সমাজিক বৈষম্য দূর করতে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর ফলে ভোটার তালিকায় তারা এখন নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়, সরাসরি ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ে নিজেদের নাম নিবন্ধন করার অধিকার পেয়েছেন তারা।
এভাবেই ধীরে ধীরে তারা ফিরে আসছেন সমাজের মূল ধারায়। আর আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনই পারে হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।