১৯৬৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গোপনে ধারণ করে সংরক্ষণ করতেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের বাঙালি কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছিল ৭ই মার্চ। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সরকারী গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই ভাষণটিও তারা রেকর্ড করেছিলেন।
সে সময় চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক মহিবুর রহমান খান যিনি অভিনেতা আবুল খায়ের নামে পরিচিত। তার নির্দেশেই ভাষণের ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণের কাজটি সম্পন্ন হয়েছিলো।
পাকিস্তানিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তা সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়েও নানান কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিলো তাদের। ফিল্ম ডেভেলপ করতে গিয়ে ধরা পড়তে পারেন সেই শঙ্কায় ট্যাগ লাইনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ না লিখে সেখানে লেখা হয়েছিলো- সাইক্লোন। যাতে অন্যরা মনে করে, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় সংশ্লিষ্ট ফিল্ম এগুলো।
৭ মার্চের এ ভাষণের ভিডিও ধারণ এবং সংরক্ষণকারীদের একজন হলেন সে সময়ের চলচ্চিত্র বিভাগের ক্যামেরা সহকারী আমজাদ আলী খন্দকার। পাকিস্তানিদের সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সচিবালয় থেকে ঢাকার দোহারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের টেপগুলো নিয়েছিলেন তিনি। ধরা পড়লে নির্ঘাত মৃত্যু, তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন আমজাদ আলী।
২৫ মার্চ গ্রেফতার অভিযানের পর বিভিন্ন অফিস-আদালতের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে পরলে সেটি নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু অভিনেতা আবুল খায়ের তখন আমজাদ আলীকে ফিল্মগুলো ট্রাঙ্কে ভরে নিয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল। সচিবালয়ের টিনশেড ভবন থেকে ট্রাঙ্কটি নিয়ে লুকিয়ে বের হয়ে পরেন আমজাদ। প্রেসক্লাবের সামনে তখন শতশত আর্মির প্রহরা আর জিপ গাড়ির টহল চলছে। বহু কষ্টে সোয়ারিঘাট ধরে নৌকায় করে জিনজিরায় আশ্রয় নেন। এরপর নবাবগঞ্জের বক্সনগরে এক বাড়িতে ধানের গোলার ভেতরে লুকিয়ে রাখেন ট্রাঙ্কটিকে।
প্রায় এক মাস পর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ট্রাঙ্কটি ভারতে নিয়ে যান আবুল খায়ের। নয় মাসের যুদ্ধ জয়ের পর ভিডিও টেপটিও ফিরে আসে নতুন বাংলাদেশে। সাদাকালো ওই ভিডিও ভাষণ ২০১৬ সালে রঙিন সংস্করণে রূপান্তরিত করা হয়। আর এভাবেই সংরক্ষণ হয়েছিল ৭ই মার্চের ভাষণের ভিডিওটি।