এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
এই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশের এফডিআই ২০ % এর মতো কমেছে। এফডিআই ছাড়াও আরোও অনেক বিষয় রয়েছে যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্রশ্নটি হচ্ছে অর্থনীতির এই বিকাশকে কি বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারবে?
বাংলাদেশ বিকাশ ধরে রাখতে পারবে কি না সে বিষয়ে জানার জন্য প্রথমে আমাদের কিছু বিষয় বুঝতে হবে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করার পরে বাংলাদেশ সরকার সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন করে। এই নীতির আওতায় বেশিরভাগ কর্পোরেশনকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ সরকার। তবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার অভাবে সমাতন্ত্র বাংলাদেশে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং শিল্প উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ধীরে ধীরে জাতীয়করণ নীতিগুলো সংশোধন করে ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বহু সংস্থাও বেসরকারি খাতে ফিরিয়ে দেয়।
এই সংস্কারের পরে বাংলাদেশের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন থেকেই অর্থনীতিকে শিল্প ও সেবা খাতের দিকে আরও নজর দেয় বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশে বিশাল শ্রমশক্তি রয়েছে, যা বিশ্বের ৮ ম বৃহত্তম। এর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। শুধু পোশাক শিল্প থেকেই দেশে মোট রফতানির ৮৪.২১% আয় হয়। আর এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ লাখ শ্রমিকের।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাক খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এই খাতটিও বাংলাদেশের জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে।
পোশাক ও সেবা খাতের বাইরে বাংলাদেশ আরেকটি আয়ের ওপর নির্ভর করে তা হলো রেমিট্যান্স।
২০১৯ সালে প্রায় ১ কোটি অভিবাসী ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পাঠিয়েছে। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ৭ % । বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রবাহ সচল রাখছে রেমিটেন্স।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি কেমন?
বাংলাদেশের উৎপাদনে বৈচিত্রতা আনা জরুরি। পোশাক শিল্পের উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা এবং ভবিষ্যতে এই নির্ভরশীলতা নেতিবাচক হতে পারে।
বাংলাদেশের আরও একটি বড় সমস্যা হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশেষ করে বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্র ও অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, অবকাঠামো তৈরিতে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২.২% ব্যয় হয় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতাও প্রকৃত বিনিময় হার ও ঘরোয়া উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য যথাযত বিকল্প নয়। এখন এ সকল চ্যালেঞ্জগুলো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উপর প্রভাব পড়ে।
এখন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কেবল সংস্কারই বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে। বেশি আয়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ উৎপাদন খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ব্যবসায়ের জন্য নীতিগুলোকে আরো উন্নত ও সহজসাধ্য করতে হবে বাংলাদেশকে।
অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন। যা প্রতিষ্ঠা করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আরও বিদেশী সংস্থাগুলো এবং বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে।
বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চীনের প্লাস ওয়ান কৌশল ব্যবহার করছে এবং চীনের জন্য বাংলাদেশ একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে। এটি বাংলাদেশকে পোশাক শিল্প থেকে বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করবে। এটি বাংলাদেশের ভব্যিষত অর্থনীতির জন্য বিরাট সুযোগ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশ ধরে রাখা নিয়ে যে প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হয়েছে তা সঠিক নয়। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি নিয়ে এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে।
তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ইনডেক্স