পরিবেশ আন্দোলনে নের্তৃত্বে থাকা সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ, গ্রিনবেল্ট মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ওয়াং গারিমাথাই, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্কের জনক ও বন রক্ষায় আন্দোলনকারী জন মিও এর সঙ্গে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি মোহাম্মদ রেজোয়ানের নাম।
বন্যাপ্রবণ এলাকায় বছরজুড়ে শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে ‘নৌকা–স্কুল’ উদ্ভাবন করায় বিশ্বের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস থেকে প্রকাশিত ক্লাইমেট রেবলস বইয়ে স্থান পেয়েছে রেজোয়ানের নাম।
তার এই উদ্ভাবন বিশ্বের দেশে দেশে প্রশংসিত হয়েছে। গত ২০০ বছরে সারা বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামে অংশ নেওয়া ৪১ জনকে নিয়ে ‘ক্লাইমেট রেবলস’ নামে সম্প্রতি বইটি প্রকাশিত হয়।
রেজোয়ান ২০০২ সালে চলনবিলে ভাসমান স্কুল প্রবর্তন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। নৌকা স্কুল বন্যাদুর্গত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, স্লোভেনিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নাইজিরিয়া, জাম্বিয়া, ফিলিপিন্সসহ কয়েকটি দেশ এই নৌকা স্কুল মডেল গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করেছে।
নৌকা স্কুলের ধারণাটি জাতিসংঘের ফান্ডস অ্যান্ড প্রোগ্রামস (ইউনিসেফ, ইউএনইপি ও ইউএনডিপি) থেকে উদ্ভাবনের স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০১৯ সালে ‘আর্থ হিরোজ’ নামের একটি গ্রন্থে রেজোয়ানকে বিশ্বের ২০ জন বিশ্বনেতার একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জনগণকে বন্যা ও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সংগ্রামী জীবনই শিশুদের শিক্ষার জন্য ভাসমান স্কুলের নকশা করতে অনুপ্রাণিত করেছে রোজোয়ানকে।
রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলের নকশা যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ সোনিয়ানস্কুপার-হিউইট, ন্যাশনাল ডিজাইন মিউজিয়াম ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ‘ডিজাইন উইথ দ্য আদার ৯০ %’ প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়।
এ ছাড়া তাঁর এই নকশা সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সে ‘বেঙ্গল স্ট্রিম’ স্থাপত্যবিষয়ক প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সন্তান রেজোয়ান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৮ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক করেন তিনি।
৫৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের নৌকা স্কুলে এক সঙ্গে ৩০ জন শিশু পাঠ নিতে পারে। সুযোগ-সুবিধা দিনে দিনে বাড়ানো হচ্ছে। নৌকার ছাদে বসানো হয় সোলার প্যানেল। রাতেও বিদ্যুত বাতিতে পাঠদান চলে।
ছোটদের পাশাপাশি বড়দের কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সংযুক্ত করা হয় পাঠাগার। ডিভাইসে সাজানো হয় তথ্যপ্রযুক্তির কম্পিউটার ল্যাব। গ্রামের অনেক শিক্ষিত লোক ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন নৌকা স্কুলে।
নৌকা স্কুল পরিবর্তনের ধারায় স্বর্ণদুয়ার খুলছে একের পর এক। ১৯ বছর ধরে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে নৌকা স্কুলের।