করোনার মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। মশাবাহিত জীবাণুর সংক্রমণজনিত রোগটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিনজনে। আর নতুন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৭ জন রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি স্বাস্থ্য অপারেশন কেন্দ্র ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১০৫ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭৩ জন। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে মোট ছয়টি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটিই ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত হয়েছে আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে আগামীতে ডেঙ্গু মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে, রাজধানীতে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে রোগীরা এখন সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি চিকিৎসা সেবাতেই আস্থা রাখছেন বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া রোগীদের প্রায় ৬২ শতাংশই ভর্তি হয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও সরকারি চিকিৎসা সেবার প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন বেশি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন আজাদুল ইসলাম আদনান। দুই দিনের মাথায় সেখান থেকে ধানমন্ডির আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন তিনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় আটদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকার বেশি।
আদনান বলেন, টাকা বেশি লাগলেও আমি বেসরকারি হাসপাতালেই গিয়েছি। কারণ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা আমার ভালো লাগেনি। পরিবেশ ভালো না। সুস্থ হওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে গিয়ে আমি হয়তো আরো অসুস্থ হয়ে পড়তাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত করোনার কারণেই সরকারি হাসপাতালের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না ডেঙ্গু রোগীরা। তবে সরকারি হাসপাতালে প্রত্যাশিত চিকিৎসার ঘাটতিও এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোয় যথাযথ পরিবেশ নেই। পাশাপাশি করোনার মধ্যে হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতাও অনেক কম।