শিশুকে সামলানোর জন্যে তাদের হাতে অনেকেই স্মার্ট ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ তুলে দেন। কিম্বা নিজে কোন কাজে ব্যস্ত বলে টেলিভিশনে চালু করে দেন কার্টুন। অথবা শিশু সন্তানকে খাওয়ানোর কাজটা সহজ করতে অনেক পিতামাতা এসব স্ক্রিনের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তখন তাদেরকে খাওয়াতে খুব একটা ঝামেলা হয় না। এটা যে শিশুর জন্য কতটা ক্ষতিকর বেশিরভাগ অভিভাবকই এই বিষয়ে ধারণা রাখেন না।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি, ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তিত হয়। সম্প্রতি গবেষণাটি বিখ্যাত গবেষণাগ্রন্থ ‘দ্য জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায়, তাদের মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের কাজ হলো মস্তিষ্কের এক অংশ থেকে অন্য অংশে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছানো। এতে সমস্যা তৈরি হলে শিশুদের ভাষার দক্ষতাসহ চিন্তাক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে তাদের কথা বলা ও পড়ার ক্ষমতাও ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না।
গবেষণাটি করতে শিশুদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের শিশুরা কতক্ষণ স্ক্রিনে সময় কাটান সে তথ্য নেন গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক ডা. জন হাটন ও তার সহকর্মীরা। এরপর শিশুদের ইন্টারনেট সুবিধা, ব্যবহারের পরিমাণ, দেখার বিষয়বস্তু সব লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে ১৫টি প্রশ্নের একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যারা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায় তারা এই পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছে। পরীক্ষা শেষে সিনসিনাতি চিলড্রেন্স হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টারে তাদের এমআরআই স্ক্যান করা হয়।
গবেষণা বলছে, যেই সব শিশুরা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায় তাদের শব্দ ব্যবহার, পড়া, তথ্য বোঝার ক্ষমতা ও নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও কমে যায়। অর্থাৎ স্ক্রিনের দিকে বেশি তাকিয়ে থাকার কারণে তাদের মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের পরিমাণ কমে যায়। এতে তাদের নিউরনের মাইলিনের গঠন পরিবর্তন হয়। ‘মাইলিন হচ্ছে চর্বি সমৃদ্ধ এক ধরনের পদার্থ যা মস্তিষ্কের সাদা অংশের নিউরন তন্তুকে ঢেকে রাখে।’ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে বার্তাবাহকের কাজ করে মাইলিন। কোনো রোগ বা অন্য কারণে এর পরিমাণ কমে গেলে, বার্তা পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।
গবেষক ডা. জন হাটন বলেন, এই শিশুরা নিজেদের চিন্তা ও অনুভবকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। বিভিন্ন বস্তু শনাক্ত করে সেগুলোর নাম বলায়ও তাদের গতি কমে যায়। তাই কোন শিশুকে দিনে ১ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে দেওয়া উচিৎ নয়।